কোয়ারেন্টাইমঃ সময় ধীরে যায়, সপ্তাহ উড়ে যায়
শুরুতেই আপনার কাছে একটা প্রশ্নঃ
গত সপ্তাহ কেমন গেছে? অনেক দ্রুত? নাকি কাটতেই চায় নি?
প্রশ্নটা মাথায় নিয়ে পড়তে থাকুন।
এই কোয়ারেন্টাইনে অনেকেই একটা উদ্ভট অনুভূতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সময় কাটতে চাচ্ছেই না, অথচ সপ্তাহগুলো যেন খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে! আপনি গত সপ্তাহ বা গত মাসের কথা চিন্তা করলে মনে হচ্ছে গত সপ্তাহ যেন খুব দ্রুত চলে গেছে। আপনারও কি এরকম হচ্ছে? হলে কেন হচ্ছে??
লন্ডন ইউনিভার্সিটি এর লেকচারার ক্যাসপার এডিম্যান এ ব্যাপারে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা করেছেন। তিনি এই ঘটনার নাম দিয়েছেন Quarantime । তিনি সংক্ষেপে লিখেছেন
কোয়ারেন্টাইম!
সময় সম্পর্কিত অনুভূতির গবেষক হিসেবে আমার উত্তর হলোঃ দিনগুলো দীর্ঘ মনে হচ্ছে কেননা আমরা একঘেয়ে পরিবেশে আটকে আছি। কিন্তু কতটুকু সময় পার হয়েছে (সপ্তাহের ক্ষেত্রে) সেটা কম মনে হচ্ছে কারণ এই সময়টুকুতে উল্লেখ করার মত ঘটনা কম ঘটেছে।
সময় হলো স্মৃতি
পুরো বিষয়টাই একটা ব্যাপারের উপর ভিত্তি করে ঘটে। সেটা হলো আমাদের মস্তিষ্ক কিভাবে সময়কে হিসাব করে। আমাদের কাছে আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে আমাদের মস্তিষ্কের কাছে সময়টা হলো স্মৃতি। একটা নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে কতগুলো ঘটনা ঘটেছে সেটা হিসাব করে মস্তিষ্ক ঠিক করে কতটুকু সময় পার হয়েছে। আপনি ষখন একটা স্বল্প কর্মের অবস্থায় দীর্ঘসময় আটকে থাকবেন তখন দুটো পরিপূরক ঘটনা ঘটবে।
প্রথমটা হবে, উল্লেখযোগ্য কাজের বা ঘটনার অভাবে আপনার সময় কাটবে না। আপনি প্রতিটি সেকেন্ডকে লক্ষ্য করবেন কিভাবে ঘড়ির কাঁটাটা এগুতে চাচ্ছে না কিংবা আপনি সময়টা পার করে দিতে চাচ্ছেন কিন্তু পার হচ্ছে না। প্রতিটা... উল্লেখযোগ্য... ঘটনা... ঘটতে... প্রচুর... সময়... নিচ্ছে...। অর্থাৎ আপনি কর্মহীন অবস্থায় প্রতিটা মুহুর্তকে লক্ষ্য করছেন এবং ৩৬০০ সেকেন্ড এর এক ঘণ্টা সময়কে পার করতে আপনার তিন হাজার ছয়শটি (!!!) সেকেন্ডকে লক্ষ্য করতে এবং পার করতে হয়েছে। এটা খুবই বিরক্তিকর এবং একঘেয়ে। সময়টা মুহুর্তবহুল কিন্তু ঘটনা বহুল হচ্ছে না।
কিন্তু আপনি যখন এই একঘেয়ে, কাটতে-না-চাওয়া, দীর্ঘ দিনগুলোর দিকে ফিরে তাকাবেন আপনি তেমন কিছুই মনে করার মত পাবেন না। এতে করে আপনার মনে হবে সময়গুলো হুশ করেই পার হয়ে গেছে। হঠাৎ করে কথাগুলো পড়তে কিম্ভুতকিমাকার লাগতে পারে কিন্তু এটাই সায়েন্স কারণ আমাদের মস্তিষ্কের সময়কে হিসাব করার পদ্ধতিটা এরকমই। আমাদের কাছে সময়টা আপেক্ষিক; খানিকটা আইনস্টাইনের কৌতুকটির মত।
এক সাংবাদিক আইনস্টাইনকে বললেন, "আপনার আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সহজ করে ব্যাখ্যা করুন।' উত্তরে আইনস্টাইন বললেন, "আপনি যখন কোন সুন্দরী মেয়ের সাথে গল্প করবেন, আপনার একঘণ্টাকে মনে হবে এক মিনিট। আর যখন উত্তপ্ত চুলার পাশে বসে থাকবেন, এক মিনিটকে মনে হবে এক ঘণ্টা।'
এক সাংবাদিক আইনস্টাইনকে বললেন, "আপনার আপেক্ষিকতা তত্ত্ব সহজ করে ব্যাখ্যা করুন।' উত্তরে আইনস্টাইন বললেন, "আপনি যখন কোন সুন্দরী মেয়ের সাথে গল্প করবেন, আপনার একঘণ্টাকে মনে হবে এক মিনিট। আর যখন উত্তপ্ত চুলার পাশে বসে থাকবেন, এক মিনিটকে মনে হবে এক ঘণ্টা।'
মস্তিষ্ক নিজেকে সময় বলে কিভাবে?
মানুষের মাথায় কোন ঘড়ি নেই। সেরেবেলামের ভিতর মিলিসেকেন্ড দ্রুততার সাথে কাজ কর্ম ঘটে কিন্তু সেখানেও টিক টিক করে আপডেট হওয়া কোন সময় ঘড়ি চলে না। অন্ততঃ মেকানিক্যাল ঘড়ির মত মিনিট সেকেন্ড হিসাব করার মত কোন ব্যবস্থা নেই। জৈবিক ঘড়ি সম্পর্কে শরীরবিদ এবং মনস্তত্ত্ব-বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় যা যা পাওয়া যায় তা হলোঃ
১। চল্লিশ বছর ধরে গবেষণার পরেও মিনিট সেকেন্ড এর মত করে হিসাব করতে পারে এরকম কোন জৈব ঘড়ি মানুষের মস্তিষ্কে পাওয়া যায় নি।
২। মস্তিষ্কের সময় জ্ঞান গণিতের সেন্ট্রাল লিমিট থিওরেম মেনে চলে। তাই মানুষের মস্তিষ্কের সময় হিসাব নিকাশ খুব খারাপ।
৩। যদি মস্তিষ্কে সেরকম ঘড়ি থাকতই তাহলে প্রতিটি ঘটনার সাথে একটি করে টাইমার চালু হতো মস্তিষ্কে।
এসবের চেয়ে স্মৃতি দিয়ে সময় হিসাব করাই মস্তিষ্কের জন্য উত্তম।
জীবনের বৈচিত্র্য
কোয়ারেন্টাইন শুধু সময় জ্ঞানের জন্যই খারাপ নয়, গবেষকরা বিভিন্ন সময় দেখিয়েছেন কোয়ারেন্টাইন মানুষকে অসুখী করে। হুমায়ুন আহমেদ তার হোটেল গ্রেভার ইন বই এ উল্লেখ করেছিলেন, তুষারপাতের সময় যখন মানুষ তাদের ঘরে বন্দী হয়ে থাকে তারা প্রচুর ঝগড়াঝাটি করে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ ডিভোর্স ওই সময় হয়।
এই লকডাউন বা নিজেদেরকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখার সময় নিজেকে সুস্থ রাখাটা কঠিন এবং জরুরীও। ঘরে ছোট ছোট গাছ লাগাতে পারেন, হতে পারে সেটা ছোট টবে কুমড়ার বিচি ফেলে কুমড়া গাছ, কিংবা ছোট্ট একটি মোরগফুলের গাছ। সবুজের সংস্পর্শে মানুষের মন ভালো থাকে। এ বিষয়ে আউটসাইড ম্যাগাজিনের এডিটর Florence Williams একটি বই লিখেছেন The Nature Fix: Why Nature Makes Us Happier, Healthier and More Creative ।
এই লকডাউন বা নিজেদেরকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখার সময় নিজেকে সুস্থ রাখাটা কঠিন এবং জরুরীও। ঘরে ছোট ছোট গাছ লাগাতে পারেন, হতে পারে সেটা ছোট টবে কুমড়ার বিচি ফেলে কুমড়া গাছ, কিংবা ছোট্ট একটি মোরগফুলের গাছ। সবুজের সংস্পর্শে মানুষের মন ভালো থাকে। এ বিষয়ে আউটসাইড ম্যাগাজিনের এডিটর Florence Williams একটি বই লিখেছেন The Nature Fix: Why Nature Makes Us Happier, Healthier and More Creative ।
Psychology Today এর মূল পোস্ট থেকে অনুবাদকৃত এবং পরিবর্তিত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন