ফরমাল মেইল লিখার নিয়ম

মেইল লিখার নিয়মগুলো প্রথমে কিছুটা সময়সাপেক্ষ মনে হয়, কিন্তু এটাকে অভ্যাসে পরিণত করতে পারলে পরবর্তীতে আর সময় নষ্ট হয় না। আর একটি ভুল মেইলে বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, একজনের ইমেজ বা ইম্প্রেশন নষ্ট হতে পারে, সবার কাছে হাস্যস্পদ হয়ে যেতে পারেন।

 https://vectorified.com/images/email-icon-for-resume-3.png

মেইল আইডি নিশ্চিত হওয়া
যার কাছে মেইল করছেন তার মেইল আইডি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। নিশ্চিত করুন যে আপনি মেইল আইডি ঠিকমতো লিখেছেন। নতুবা একজনের মেইল আরেকজনের কাছে চলে যেতে পারে। গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে।
মানুষজন মেইল আইডি লিখতে গিয়ে নানা রকম ভুল করে, যেমনঃ স্পেস দিয়ে দেয়া - ‘markjukarbarg@gmail .com’ কিংবা এক্সটেনশন ভুল লেখা ‘markjukarbarg@gmai.com’ ইত্যাদি। মনে রাখবেন মেইল পাঠানোর সময় ভুল মেইল আইডি লিখা মানে কিন্তু আপনার কমিউনিকেশন ব্যাহত হওয়া। প্রাসঙ্গিক কথা হিসাবে বলছিঃ অনেকে নিজের মেইল আইডি অন্যকে দেয়ার সময়ও এরকম ভুল গুলো করে থাকেন। চাকরি আবেদনের সময় যদি আপনি নিজের মেইল ভুল দেন, তাহলে সেই চাকরি আর জীবনেও পেতে হবে না।

 

Cc বনাম bcc

BCC

CC

Bcc তে কারা আছে সেটা মেইলের প্রাপক দেখতে পায় না।

Cc তে কারা আছে সেটা মেইলের প্রাপক দেখতে পায়।

প্রাপক মেইলের রিপ্লাই দিলে bcc তে যারা আছে তারা দেখতে পায় না।

প্রাপক মেইলের রিপ্লাই দিলে cc তে যারা আছে তারা দেখতে পায়।

সুতরাং আপনি যেসব মানুষকে শুধুমাত্র আপনার পাঠানো মেইল দেখাতে চান তাদেরকে bcc তে রাখবেন। আর যাদেরকে মেইল-রিপ্লাই এর পুরো কথোপকথনে রাখতে চান তাদের cc তে রাখবেন।  

 

*** মনে রাখবেন প্রয়োজন নেই এমন মানুষকে মেইলের bcc বা cc তে রাখবেন না। অপ্রয়োজনীয় মেইল বিরক্তি উদ্রেক করে। আপনি রিপোর্টিং বসকে কাজের অগ্রগতি জানিয়ে মেইল করলে সেখানে অপ্রয়োজনে CTO বা CEOকে cc/bcc তে রাখবেন না।

 

Subject খুব যত্ন করে লিখতে হয়। subject শব্দটির অর্থ হলো বিষয় বা প্রসঙ্গ। সাবজেক্ট এমনভাবে লিখতে হয় যেন যে মেইলটি পাচ্ছে, সে যেন ধারণা পায় কি কারণে মেইলটি পাঠানো হয়েছে। সাবজেক্ট একটি ছোট বাক্য বা বাক্যাংশে লিখতে হয়। যেমনঃ আপনি ছুটির আবেদন করছেন। আপনি লিখবেন “Prayer for leave” । যদি ছুটিটি অগ্রীম নিতে হয় তাহলে “Prayer for leave in advance” । যদি কারো এপয়েন্টমেন্ট চেয়ে মেইল করেন তাহলে “Request for appointment”; ভালো হয় যদি আরো নির্দিষ্ট করতে পারেন। যদি আপনি একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যেমন আগামী সপ্তাহের মধ্যে এপয়েন্টমেন্ট চান তাহলে “Request for appointment within a week”। তবে বেশী লম্বা সাবজেক্ট লেখা আনপ্রফেশনাল। সাবজেক্টের দৈর্ঘ্য দশ শব্দের মাঝে রাখা ভালো।


চাকরির আবেদনের সাবজেক্ট আরো যত্নসহকারে লিখতে হয়। কেননা প্রাপক যদি না বোঝেন এটা চাকরির আবেদন এবং মেইল না পড়ে ফেলে রাখেন তাহলে আপনার চাকরির সম্ভবনা শেষ। কিছু কিছু কোম্পানি তাদের চাকরির মেইলে সাবজেক্ট কি হতে হবে সেটা বলে দেয়। সেক্ষেত্রে আপনার কষ্ট কমে গেলো। যদি মেইলের সাবজেক্ট কি হবে ওটা বলে দেয়া না হয় তাহলে এভাবে লিখতে পারেন “Job Application for position of Assistant Manager” ।

 

সম্বোধন একটা মেইলে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। যথাযথ সম্বোধন আপনার সিরিয়াসনেস এর পরিচায়ক। আর যখন কারো কাছে মনে হয় যে, আপনি তাকে সঠিক গুরুত্ব দিয়েছেন, তার কাছেও আপনার গুরুত্ব বাড়বে। মেইলের সম্বোধনে এখন Dear শব্দটি বহুল ব্যবহৃত। আপনি যখন আপনার কোন অফিশিয়াল সিনিয়রের কাছে মেইল করবেন তখন নিশ্চিন্তে ‘Dear Sir’ ব্যবহার করুন, Madam শব্দটির ব্যবহার কমে এসেছে। প্রাপক অফিশিয়াল সিনিয়র না হলে জানার চেষ্টা করুন মেইলের প্রাপকের নাম কি। অনেক সময় আপনি হয়তো কোন সার্ভিসের জন্য বা চাকরির জন্য কোন কোম্পানিতে মেইল করছেন যার প্রাপকের নাম আপনার জানা নেই। খুব ভালো হয় যদি আপনি নামটা জেনে নিতে পারেন। নামের মাধ্যমে কমিউনিকেশনের সাফল্য বেশি হয়। যদি একান্তই নাম না জানেন তখন বাধ্য হয়েই আপনাকে ‘To whom it may concern’ বা ‘To whom it concerns’ ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু আবার বলছি এটা ফরমাল সম্বোধনের মাঝে নিকৃষ্টতম।

যদি আপনি প্রাপকের নাম জানেন তাহলে প্রথম শব্দ ‘Dear’ , পরের শব্দ Mr.(পুরুষ) কিংবা Ms. (নারী, এখন Miss/Mrs. ব্যবহৃত হয় না। বিবাহিত অবিবাহিত সবার জন্যই Ms. উচ্চারণ হবে মিজ), শেষ শব্দ প্রাপকের শেষ নাম। ধরুণ প্রাপক নাদিয়া কবির, আপনি সম্বোধনে লিখবেন ‘Dear Ms. Kabir’। যদি প্রাপক হয় রাফাতুল আমিন তাহলে সম্বোধন হবে ‘Dear Mr. Amin’।

 

পরিচয় পর্বঃ  

মেইলের শুরুতেই নিজের পরিচয় দেবেন কি না সেটা নির্ভর করে প্রাপকের সাথে আপনার সম্পর্ক এবং মেইলের বিষয়ের উপর। প্রাপক যদি আপনার পরিচিত হয় তাহলে মেইলের শুরুতে নিজের পরিচয় দেবার দরকার নেই। আপনি আপনার বসকে মেইল করার সময় নিজের পরিচয় দেবেন না। কিন্তু ইন্টারনেট সার্ভিস এর ঝামেলা নিয়ে মেইল করার সময় নিজের পরিচয় এবং আইডি দিয়ে নেবেন। একইভাবে চাকরির আবেদনেও শুরুতে নিজের পরিচয় দেবেন। এর পর মেইলের অন্যান্য কথা বার্তা বলবেন।

 

গ্রামার এবং অন্যান্যঃ 

মেইলের গ্রামার খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বিদেশী ক্লায়েন্টকে ভুল বানানে মেইল করলে আপনার কোম্পানির ইজ্জতহানি হবে। বসকে ভুল বানানে মেইল করলে বস ভাববে আপনি অযোগ্য, একটা সামান্য মেইল করতেও ভুল করেন, কাজকর্ম করবেন কি করে! চাকরির আবেদনে ভুল বানান আপনার যোগ্যতা সম্পর্কে রিক্রুটারকে সন্দিহান করবে। তাই মেইলের বানান এবং গ্রামার বারবার চেক করতে হবে। ব্রাউজারে grammarly এক্সটেনশনটি ইন্সটল করে নিতে পারেন। এটি আপনার গ্রামারের বেসিক ভুলগুলো ধরিয়ে দেবে।

 মেইলে আজাইরা কথাবার্তা লিখবেন না। সংক্ষেপে আসল কথা লিখবেন। সরল, সহজ, সুন্দর বাক্য এবং সহজবোধ্য শব্দ ব্যবহার করবেন। অযথা কঠিন ভাষায় লিখে আপনার ইংরেজী জ্ঞান ঝাড়বেন না। যথাসম্ভব Active voice এ লিখবেন, passive voice এড়িয়ে চলবেন। যেমনঃ 'In this e-mail my CV is attached' এর চেয়ে 'I am attaching my CV in this e-mail' বাক্যটি ব্যবহার করবেন। অচেনা মানুষ যারা লিঙ্গ সম্পর্কে আপনি জানেন না তার জন্য He না লিখে He/She এভাবে লিখবেন।

মেইলের শেষে প্রাপককে শুভকামনা জানাতে ভুলবেন না। এক দুই লাইনে তাকে ধন্যবাদ এবং বেস্ট উইশ করে দেবেন। আপনার সম্পর্কে প্রাপকের উষ্ণ ধারণা হবে।

 

সমাপ্তিঃ 

মেইলের শেষে আমরা অনেকে ‘Your faithfully’, ‘Your obediently’, ‘Your most obedient’ এসব লিখে অভ্যস্ত। এই সম্বোধনগুলো ব্রিটিশরা আমাদের faithful, obedient চাকর গণ্য করে শিখিয়ে গেছে। এত ভারী শব্দ না লিখলেও চলবে। একদম সাদামাটাভাবে ‘With regards’ । তারপর নাম, আপনার পদমর্যাদা (অবশ্যই অফিশিয়াল ক্ষেত্রে)। তারপর আপনার সাথে যোগাযোগ করার তথ্যঃ ফোন নাম্বার, ক্ষেত্রবিশেষে স্কাইপ বা অন্যান্য আইডি।
ধরুন আপনি একটা অফিসের জুনিয়র ম্যানেজার, আপনি আপনার বসকে একটা মেইল করেছেন। সেক্ষেত্র আপনার বিদায়ী অংশ হবে এরকমঃ

With regards

Obaidul Kabir

Junior Manager

XYZ Company Limited 

Mobile: 01555-555555

Skype: obaidulKabir99

মনে রাখবেন চাকরি অবেদনের জন্য এই মোবাইল নাম্বার দেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

    

 

এটাচমেন্টঃ

আমার নিজের এই ভুলটা প্রায়ই হয়। এটাচমেন্ট দিতে ভুলে যাওয়া। ধরুন আপনি বসকে একটা এক্সেল ফাইল দিচ্ছেন বা চাকরি নিয়োগকর্তাকে পিডিএফ ফরম্যাটে সিভি পাঠাচ্ছেন (সিভি সবসময় পিডিএফ ফরম্যাটে পাঠাতে হয়, ডক ফরম্যাটে নয়)। আপনি মেইলে লিখলেন ‘Please check the attachment’ অথচ আপনি এটাচমেন্ট দিতেই ভুলে গেছেন। তাই মেইল লিখার আগেই এটাচমেন্ট ফাইল যুক্ত করে নিন। নতুবা প্রাপকের কাছে হাস্যস্পদ এবং অপদস্থ হবেন।

বারবার চেক করে নিন সবকিছু ঠিকঠাক মতো করেছেন কি না। এটা আপনার কাছে সময় অপচয় মনে হতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আপনার অনেক ঝামেলা কমে যাবে। 

 

মেইল শিডিউলিংঃ

এখন সব মেইলে শিডিউল অপশন থাকে। এ অপশনটি ব্যবহার করে আপনি মেইল লিখার পর সাথে সাথে না পাঠিয়ে সময় সেট করে দিতে পারেন। যেমনঃ আপনি সকাল দশটায় মেইল লিখে সেটা দুপুর বারোটায় শিডিউল করে রাখতে পারেন। দুপুর বারোটা বাজলে সয়ংক্রিয় ভাবে মেইলটি চলে যাবে। আপনাকে আর নতুন করে তখন সেন্ড বাটনে ক্লিক করতে হবে না। 

How to schedule an email in Gmail - The Verge

 

আপনি নিরাপত্তার জন্য মেইল লিখার পর সাথে সাথে না পাঠিয়ে পাঁচ বা দশমিনিট পর শিডিউল করতে পারেন। এতে করে আপনি কোন ভুল করলে সেটা বের করার জন্য কিছু সময় পাবেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

দলিলে ব্যবহৃত ১৩০ টি অতি অপ্রচলিত শব্দ

বই রিভিউঃ Venomous: How the Earth's Deadliest Creatures Mastered Biochemistry