বৈশ্বিক জনগোষ্ঠী সংক্রান্ত কুইজ ও FACTFULLNESS

বিশ্ব সম্পর্কে আপনি আসলে কতটুকু ধারণা রাখেন? কম নাকি বেশি? নাকি বেশিই কম। কম জানাটা লজ্জার কিছু না, শার্লক হোমসও জানতেন না যে, সৌরজগতে নয়টি (বর্তমানে আটটি) গ্রহ আছে। তবে না জানা বা ভুল জানার ব্যাপারটাকে একটু অন্যভাবে দেখেছিলেন ‘Factfullness’ বই এর লেখক হান্স গসলিং। বেশি বকবক না করে একটা কুইজ দিয়ে ফেলুন আগে।



 

 

 

 

 

 

 

 

 

আপনার উত্তরগুলো (ক, খ, গ) একটি কাগজে বা আপনার মোবাইলের নোট সংক্রান্ত কোন এপ এ লিখে ফেলুন ঝটপট।

কুইজঃ

১। বিশ্বের নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মধ্যে কত শতাংশ মেয়েশিশু প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পন্ন করে?

ক) ২০%
খ) ৪০%
গ) ৬০%

২। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ কোথায় বাস করে?

ক) নিম্ন আয়ের দেশে
খ) মধ্যম আয়ের দেশে
গ) উচ্চ আয়ের দেশে

৩। গত বিশ বছরে অতি দরিদ্য জনসংখ্যার শতকরা পরিমাণ

ক) দ্বিগুণ হয়েছে
খ) মোটামুটি আগের মতোই আছে
গ) অর্ধেক হয়েছ

৪। বর্তমানে বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু কত?

ক) ৫০ বছর
খ) ৬০ বছর
গ) ৭০ বছর

৫। বিশ্বে এখন ২০০ কোটি শিশু বসবাস করছে যাদের বয়স ০ থেকে ১৫ বছর। ২১০০ সালে জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী বিশ্বে শিশু জনসংখ্যা কত হবে?

ক) ৪০০ কোটি
খ) ৩০০ কোটি
গ) ২০০ কোটি

৬। জাতিসংঘ অনুমান করছে যে, ২১০০ সালে বিশ্বের লোকসংখ্যা আরো ৪০০ কোটি বাড়বে। মূলতঃ কাদের কারণে?

ক) শিশুদের (যাদের বয়স ১৫ এর কম) সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে
খ) প্রাপ্তবয়স্কদের (যাদের বয়স ১৫ থেকে ৭৪ এর মধ্যে) সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে
গ) বৃদ্ধদের (যাদের বয়স ৭৪ এর বেশি) সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে

৭। প্রাকৃতিক দুর্যোগ (বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি) এর কারণে মৃত্যুর সংখ্যা গত একশ বছরে কিরকম পরিবর্তিত হয়েছে?

ক) দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে
খ) একই রকম আছে
গ) অর্ধেকের চেয়ে কমে গিয়েছে

৮। পৃথিবীতে বর্তমানে ৭০০ কোটি মানুষের বসবাস। জনসংখ্যার বিস্তার কোন ছবিটি সবচেয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছে? (প্রতিটি মানুষের আকৃতি ১০০ কোটি মানুষ বোঝাচ্ছে)


৯। পৃথিবীর ১-বছর বয়সী শিশুদের কত শতাংশ বর্তমানে টিকাদান কর্মসূচীর আওতায় এসেছে?

ক) ২০%
খ) ৫০%
গ) ৮০%

১০। বর্তমান বিশ্বে ৩০ বছর বয়সী পুরুষরা মাঝে গড়ে তাদের জীবনের ১০ বছর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন কাটিয়েছে। একই বয়সী নারীরা গড়ে কত বছর শিক্ষার পেছনে দিয়েছেন?

ক) ৯ বছর
খ) ৬ বছর
গ) ৩ বছর

১১। ১৯৯৬ সালে বাঘ, বড় পান্ডা এবং কালো গণ্ডারকে ‘বিপন্ন’ (Endangered) তালিকাভুক্ত করা হয়েছিলো। বর্তমানে এ তিনটি প্রাণির ক’টি ‘মারাত্মকভাবে বিপন্ন’ (Critically Endangered) এর তালিকায় আছে?

ক) দুটি
খ) একটি
গ) একটিও নয়

১২। পৃথিবীর কত শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে?

ক) ২০%
খ) ৫০%
গ) ৮০%

১৩। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, আগামী ১০০ বছরে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা

ক) বেড়ে যাবে
খ) আগের মতোই থাকবে
গ) কমে যাবে

এবার উত্তরগুলো মিলিয়ে নিন।
১: গ,    ২: খ,    ৩: গ,    ৪: গ,    ৫: গ,    ৬: খ,    ৭: গ,     ৮: ক,    ৯: গ,           ১০: ক, ১১: গ,   ১২: গ,   ১৩: ক

 

তারপর স্কোর করুন; আপনাদের কতটা সঠিক হয়েছে?

হান্স গসলিং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে গিয়েছেন। উত্তর সঠিক হবার পরিমাণ আশ্চর্যজনকভাবে কম। গত বিশ বছরে (অবশ্যই করোনা ভাইরাস হানা দেয়ার পূর্বে) চরম দারিদ্র্যের মাঝে থাকা জন সংখ্যার শতকরা পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই প্রশ্নটির সঠিক উত্তর দিতে পেরেছে মাত্র ৭%। এবং অনেক শিক্ষিত মানুষই এই উত্তরটা ভুল দিয়েছে। ১৩ নাম্বার প্রশ্ন অর্থাৎ বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ে করা প্রশ্নটির উত্তর সঠিক দিয়েছেন ৮৬% মানুষ কারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ব্যাপারটি তিন দশক হলো বিজ্ঞানীদের টেবিল ছেড়ে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এই ১৩ প্রশ্নটি বাদ দিলে বাকি প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর পাবার পরিমাণ অস্বাভাবিক রকম কম।

লেখক তার দল নিয়ে ১৪ টি দেশে ১২০০০ মানুষকে প্রশ্নগুলো করেছিলেন। উত্তরদাতারা প্রথম ১২টি প্রশ্নের মাঝে গড়ে মাত্র দুটি উত্তর সঠিক দিতে পেরেছেন। একজনও সবক’টি প্রশ্নের উত্তর সঠিক দিতে পারেননি, এবং ১৫% উত্তরদাতা ১২টিই ভুল করেছেন।

সম্ভাব্যতার সূত্র বলে কেউ যদি বিক্ষিপ্তভাবে সম্পূর্ণ না জেনে আন্দাজে উত্তর দেয় তারপরেও যেহেতু প্রতিটিই প্রশ্নে ৩ টি করে সম্ভাব্য উত্তর দেয়া আছে তাই এমনিতেই এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১২/৩ = চারটি উত্তর সঠিক দিতে পারার কথা। আমি যদি প্রশ্নগুলো একটা শিম্পান্জিকে করি আর তিনটি কলার উপর ক, খ, গ লিখে তার দিকে ছুড়ে দিয়ে প্রথম স্পর্শ করা কলার উত্তরকে শিম্পান্জির দেয়া উত্তর ধরে নেই তাহলে সম্ভাব্যতার সূত্রানুযায়ী শিম্পান্জি চারটা সঠিক উত্তর দেবে যেখানে শিক্ষিত হোমো স্যাপিয়েন্সরা গড়ে দুটো করে সঠিক উত্তর দিয়েছে। কিন্তু কেন মানুষ বিশ্ব সম্পর্কিত কুইজে শিম্পান্জির কাছে হেরে যাবে? লেখক হান্স গসলিং এর মতে মানুষ সিস্টেমেটিকভাবে ভুল জানে। এই ভুল জ্ঞান বা উপাত্তের অভাবে নয়, উপাত্তকে প্রসেসিং করার পদ্ধতিতে মানবজাতির গলদ আছে।


এই প্রসেসিং পদ্ধতির গলদের কারণেই মানুষের উপর অপটিক্যাল ইলিউশন প্রয়োগ করা যায়, মানুষকে ভুল বোঝানো যায়, ডাটাকে চাইলে গ্রাফ বা অন্যান্য টুল দিয়ে ভুলভাবে উপস্থাপন করা যায়। সবশেষে নিচের ছবিটি দেখুন। স্টিভ জবস বিভিন্ন ফোনের মার্কেট শেয়ার বোঝানোর জন্য যে পাই চার্টটি দেখাচ্ছেন সেখানে পাই চার্টটি এমনভাবে বাঁকা করে দেখানো হচ্ছে যেন এপলের ১৯.৫% মার্কেট শেয়ারের আকৃতি ২১.২% এর চেয়ে বড় দেখাচ্ছে। কারণ স্টিভ জবস মানুষের সিস্টেমেটিক ভুল করার প্রবৃত্তিকে কাজে লাগিয়েছেন। মানুষের মস্তিষ্ক সংখ্যা প্রসেস করার চেয়ে ছবি দ্রুত প্রসেস করতে পারে। তাই আপনি ছবিতে দেখবেন ২১.২ এপলের ১৯.৫ এর চেয়ে বড় কিন্তু আপনার মস্তিষ্ক সংখ্যার আগে যেহেতু ছবিকে প্রসেস করে ফেলবে তাই আপনি নিজের অজান্তে এপলের মার্কেট শেয়ারকে বেশি ধরে নেবেন।

 

সবশেষে সবাইকে Factfulness বইটি পড়ার আমন্ত্রণ রইলো ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ফরমাল মেইল লিখার নিয়ম

বই রিভিউঃ Venomous: How the Earth's Deadliest Creatures Mastered Biochemistry

দলিলে ব্যবহৃত ১৩০ টি অতি অপ্রচলিত শব্দ